সোয়াইন ফ্লু : কী করতে হবে

0
416

ঢাকা, আগস্ট ৩১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- এইচ১এন১ ( সোয়াইন ফ্লু) আক্রান্ত হলে বা আক্রান্ত হওয়ার আশংকা করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পরীক্ষা- নিরীক্ষাসহ সব সুবিধাও বিনামূল্যে পাওয়া যাবে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, “সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে আগে নিজেকে সতর্ক হতে হবে। বাংলাদেশে সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশির সঙ্গে সোয়াইন ফ্লুর অনেক মিল রয়েছে। ফলে এসব লক্ষণ দেখা গেলে এখন এ রোগ হয়েছে ধরে নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাসাতে থেকেই চিকিৎসা নেওয়া যায়। তবে, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট বা অন্য সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হতে পারে।”

কিছুদিন আগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে অণুজীব বিজ্ঞানী ড. আলিমুল বলেন, জ্বরে আক্রান্ত হলেই সোয়াইন ফ্লু হয়েছে- এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। কারও শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি এবং সেইসঙ্গে মাংসপেশীতে ব্যথা, তীব্র মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, হাঁচি-কাশি, বমি ও ডায়রিয়া হলে সেই ব্যক্তি সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

তিনি বলেন, সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে পাঁচ দিন পরে সোয়াইন ফ্লু শনাক্ত হয়। বেশিরভাগ সমস্যায় বাসাতে থেকেই চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। তবে শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়ার সমস্যা থাকলে জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এসব লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে বাড়িতে আলাদা ঘরে রাখতে হবে এবং রোগীসহ বাড়ির সবার ডিটারজেন্ট অথবা সাবানে পরিস্কার করা কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে বলে জানান তিনি।

এ অবস্থায় রোগীর ব্যপারে যাবতীয় তথ্য নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জানাতে হবে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

অ্যাজমা রোগী, ডায়াবেটিস রোগী, গর্ভবতী মহিলা, ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু, ৬৫ বা ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি এবং ফুসফুস আক্রান্তজনিত যে কোনো রোগী সোয়াইন ফ্লু ঝুঁকিতে থাকে।

রাজধানীর ৯৮টি ওয়ার্ড চিকিৎসা কেন্দ্রে ডাক্তারদের সোয়াইন ফ্লু বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজধানীর আটটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সোয়াইন ফ্লু বা অন্য কোন ধরণের ফ্লু হয়েছে সন্দেহ করলে এসব হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে।

কোন ব্যক্তির সন্দেহ হলে তিনি নিজেই রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআর-এ গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারেন। সেখানে শারিরিক অবস্থা দেখে চিকিৎসক পরীক্ষা করার উপযোগী মনে করলে বিনামূল্যে পরীক্ষা করবেন। সোয়াইন ফ্লু পজিটিভ হলে চিকিৎসা বিষয়ে পরামর্শ দেবেন।

সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করবেন। নিউমোনিয়া বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে চিকিৎসক বক্ষব্যধি হাসপাতাল বা অন্য কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফার্ড করতে পারেন।

সোয়াইন ফ্লু থেকে নিজের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশকিছূ পরামর্শ দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে

১. হাঁচি বা কাশির সময় আপনার নাক ও মুখ টিস্যু দিয়ে ভালভাবে ঢেকে নিন এবং ব্যবহার শেষে টিস্যুটি ময়লা-অবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দিন।

২. পানি ও সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত পরিস্কার করুন, বিশেষ করে হাঁচি বা কাশির পর।

৩. পানি ও সাবান দিয়ে নিয়মিত আপনার হাত পরিস্কার করুন, বিশেষ করে হাঁচি বা কাশির পর। এক্ষেত্রে অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ডক্লিনার/হাত পরিস্কারকও কার্যকর।

৪. আপনার চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এভাবে জীবাণু ছড়ায়।

৫. অসুস্থ ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।

৬. ফ্লু জাতীয় অসুস্থতায় আক্রান্ত হলে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে যথাসম্ভব নিজেকে আলাদা রাখুন। জ্বর কমানোর কোন প্রকার ওষুধ ছাড়াই জ্বর সেরে গেলেও কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা বাড়িতে থাকুন।

৭. ফ্লু জাতীয় রোগের লক্ষণবা শ্বাসকষ্ট তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আপনি পালন করতে পারেন এমন আরও কিছু পদক্ষেপ:

ক. বিদ্যালয় বা অফিসে উপস্থিতির ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য পরামর্শ অনুসরণ করুন।

খ. কোন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে আপনাকে সপ্তাহকাল বাসায় অবস্থান করার প্রয়োজন হতে পারে বলে সবসময় প্রস্তুত থাকুন। এ সময় প্রতিরোধক ওষুধ, অ্যালকোহল ভিত্তিক হাত মোজা, টিস্যু এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দ্রব্য প্রয়োজন হতে পারে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসআইটি/এএনএস/এসএইচ/২৩২৩ ঘ.