রোযা আল্লাহর একান্ত নিজের
১৬২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ্ বলেছেন, “পূণ্য দশগুন ও তার চেয়েও বেশি ধরা হয়। আর পাপ একটিই ধরা হয়, তাও আমি মুছে ফেলি। আর রোযা আমারই জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।” রোযা মহান আল্লাহর আযাব থেকে পরিত্রানের ঢালস্বরূপ। যা দিয়ে তরবারীর মত অস্ত্র থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
১৬৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক বলেন, “প্রতিটি পূণ্য ওর দশগুনের সমপরিমাণ হতে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত ধরা হয়। কিন্তু রোযা আমারই জন্য, আর আমিই ওর প্রতিদান দিয়ে থাকি।” রোযা দোযখ থেকে পরিত্রানের ঢাল স্বরূপ আর রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির গন্ধের চেয়েও বেশি সুরভিত। আর যখন রোযা রাখা অবস্থায় তোমাদের বিরুদ্ধে কোন মুর্খ তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে, তখন তার বলা দরকার, আমি রোযাদার।”
১৬৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করেন আদম সন্তানের প্রতিটি আমলের সওয়াব দশগুন থেকে সাতশ’গুণ পর্যন্ত অথবা তার চেয়েও বেশি বাড়িয়ে দেয়া হয়। মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেন, শুধু রোযা ছাড়া।“কারণ তা বিশেষভাবে আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব। আমার জন্য সে তার কামসপৃহা ও আহার বর্জন করে।” রোযাদারের জন্য আনন্দ রয়েছে, একটি আনন্দ তার ইফতারের সময়, আর অপরটি তবে প্রতিপালকের দিদার লাভের সময়। নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।”
১৬৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেন, “আদম সন্তানের প্রতিটি কর্ম তার নিজের জন্য, একমাত্র রোযা ছাড়া। নিশ্চয় তা আমার জন্য এবং আমিই ওর প্রতিদান দেব।” রোযা একটি ঢালস্বরূপ। তোমাদের কারো জন্য যখন রোযার দিন উপস্থিত হয়, সে যেন কোন মন্দ কথা না বলে এবং চিৎকার না করে। আর কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা তার সাথে ঝগড়া কর, তখন তার কসম! নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির গন্ধের চেয়েও উত্তম। রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে যা সে উপভোগ করে, যখন সে ইফতার করে তখন এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে দেখা করবে তখন।” শায়খাইন এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ১৬৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।” নিশ্চয়ই রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে -একটি যখন সে ইফতার করে তখন, আরেকটি যখন সে আল্লাহর সাথে দেখা করবে এবং আল্লাহ্ তাকে প্রতিদান দেবেন তখন। আর যার হাতে মুহাম্মদের জীবন, তার কসম! নিশ্চয়ই রোযাদারদের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির গন্ধের চেয়েও বেশী সুগন্ধময়।” নাসায়ী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ১৬৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “বান্দাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় সে লোক, যে ইফতারের (রোযা খুলার) ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তরাম্বিত।”
১৬৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- রোযা ঢালস্বরূপ, তা মু’মিনের দুর্গসমূহের একটি দুর্গ। আমল তার আমলকারীর জন্য। আল্লাহ্ বলেন, “রোযা আমার জন্য এবং আমিই ওর প্রতিদান দেব।”
১৬৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ইসরাঈল বংশের জনৈক নবীর প্রতি এ প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছিলেন, “তোমার সম্প্রদায়কে এ সংবাদ দাও যে, এরূপ কোন বান্দা নেই, যে আমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোন এক দিন রোযা না রাখে; আমি যখন তাকে দৈহিক সুস্থতা দান করি এবং তাকে বড় রকমের পুরস্কার দিয়ে থাকি।”
১৭০. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ্ র িফেরেশতাদেরকে (কেরামান কাতেবীন) এ বলে প্রত্যাদেশ করেন যে, “আসরের পরে আমার রোযাদার বান্দাদের কোন পাপ লিখ না।”
১৭১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেন, “যার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমার নিষিদ্ধ কর্মগুলো থেকে রোযা রাখে না (নিবৃত হয় না), আমার জন্য তার পানাহার বর্জনের কোন প্রয়োজন নেই।”
১৭২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আল্লাহ বলেছেন, “আদম সন্তানের প্রতি আমল তারই জন্য, শুধু রোযা ছাড়া। রোযা আমারই জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। নিশ্চয়ই রোযাদারের মুখের গন্ধ আমার কাছে মৃগনাভির গন্ধের চেয়েও বেশি সুগন্ধময়।”
ইয়াওমুল বীযের রোযা
১৭৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় আদম (আ) যখন ভূল বশত অবাধ্য হলেন এবং গাছের ফল খেলেন, আল্লাহ্ তখন তার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করলেন, “হে আদম! আমার কাছ থেকে নেমে যাও। আমার ইযযতের কসম! যে আমার অবাধ্য হয়েছে, সে আমার কাছে থাকতে পারবে না।” অনন্তর মলিন মুখে তিনি দুনিয়াতে নেমে এলেন। তখন ফেরেশতাগণ সিজদায় পড়ে ফরিয়াদ জানাতে লাগল এবং বলল, “হে প্রতিপালক! তুমি নিজ হাতে যা সৃষ্টি করেছে, যাকে বেহেশতে স্থান দিয়েছে, একটি মাত্র পাপের কারণে তার সমুদায় উজ্জলতা পাল্টে দিলে?” অনন্তর আল্লাহ্ প্রত্যাদেশ করে বললেন, হে আদম! আমার উদ্দেশ্যে মাসের ১৩ তারিখ এ দিনটিতে রোযা রাখ, ” অতঃপর আদম (আ) সেদিন রোযা রাখলেন, তারপর তার দেহের একতৃতীয়াংশ সাদা হয়ে গেল। তারপর আল্লাহ্ পুনরায় প্রত্যাদেশ পাঠালেন, “হে আদম! আমার জন্য মাসের ১৪ তারিখ এ দিনটিতে রোযা রাখ” তারপর আল্লাহ্ তার কাছে প্রত্যাদেশ পাঠালেন, “হে আদম! তুমি আমার উদ্দেশে ১৫ তারিখ এ দিনটিতে রোযা রাখ”, তখন তিনি সেদিন রোযা রাখলেন, তারপর তার পুরো দেহ সাদা হয়ে গেল। অতঃপর এ দিনগুলির নাম রাখা হয়েছে আইয়ামুল বীয অর্থাৎ শ্বেত-শুভ্র দিবস।”
শবে ক্বদর ও দু’ঈদ সম্পর্কে
১৭৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যখন ক্বদরের রাত আসে, তখন জিবরাঈ’ল (আ) ফেরেশতাদের একটি দলসহ অবর্তীন হন এবং যে বান্দা দাড়ানো কিংবা বসা অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করে, তাদের প্রত্যেকের প্রতি দু’আ বর্ষণ করতে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের ঈ’দ আসে, তখন আল্লাহ ্ তাদের জন্য তার ফেরেশতাদের সামনে গৌরব করে বলেন, “হে আমার ফেরেশতাগণ! যে শ্রমিক তার কাজ শেষে করেছে তার কি প্রতিদান হতে পারে?” ফেরেশতাগণ নিবেদন করেন, “হে আমাদের রব! তার প্রতিদান হচ্ছে, তার ‘পুরো পারিশ্রমিক’ দিয়ে দেয়া।” আল্লাহ্ বলেন, “হে ফেরেশতাগণ! আমার বান্দা ও বাদীগণ, তাদের প্রতি আমার নির্ধারিত ফরয পুরণ করেছে, তারপর উচ্চঃস্বরে আমার কাছে দু’আ করতে করতে ঈ’দের নামাযের জন্য বেরিয়ে এসেছে। এতএব আমার ইযযত ও জালালের কসম! আমার অনুগ্রহ, আমার উচ্চ মর্যাদা ও আমার উচ্চ পদের কসম! নিশ্চয়ই আমি তাদের দু’আ কবুল করব।” তারপর তিনি বলেন, “তোমরা প্রত্যাবর্তন কর, নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে মাফ করে দিয়েছি। অতঃপর তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্থায় ফিরে আসবে।”