জুলম ও জালিম

0
1068
জুলম সম্পর্কে
২৫৮. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামতের দিন শাসকদেরকে হাযির করা হবে, শাসনে যারা নূন্যতা বা শৈথিল্য করেছে এবং যারা সীমাতিক্রম করেছে, তখন আল্লাহ বলবেন, “তোমরা আমার দুনিয়ার কোষাধ্য ছিলে এবং আমার বান্দাদের ভরসাস্থল ছিলে, আর তোমাদের মধ্যে আমার অভিব্যক্তি ন্যস্ত ছিল।” তারপর তিনি সে লোককে বলবেন, “হদ্দ প্রয়োগে যে ক্রটি করেছিল, তুমি যে কাজ করেছ তার প্ররোচক কে?” প্রত্যুত্তরে সে বলবে, “আমি তার প্রতি দয়া করেছিলাম।” তিনি তখন বলবেন, “তুমি কি আমার বান্দাদের প্রতি আমার চেয়ে বেশি দয়ালু?” আর যে লোক শাস্তির সীমা অতিক্রম করেছিল তাকে বলবেন, “তুমি যা করেছ, সে কি এটা করতে তোমাকে প্ররোচিত করেছে?” সে বলবে, “রাগের বশে আমি এমন করেছি।” আল্লাহ্‌ তখন বলবেন, (হে ফেরেশতাগণ!) তাদেরকে নিয়ে যাও এবং দোযখের কোন খুটির সাথে বাঁধ।”

আবূ সাঈদ নাক্কাস এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

২৫৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্‌ (স্বীয় বান্দাদের) অনুসরণ করবেন, এবং (পোলসিরাতের) সেতুর উপর স্বীয় পা স্থাপন করবেন এবং বলবেন, “আমার ইযযত ও জালালের কসম! আজকের দিনে অত্যাচার আমাকে অতিক্রম করে যেতে পারবে না।” এতএব, তিনি মানুষের একে অপরের কাছ থেকে অবিচারের প্রতিদান গ্রহণ করবেন; এমন কি তিনি ভাঙ্গা শিং বিশিষ্ট বকরীকে একটি গুঁতা দেয়ার প্রতিদান বিনিময়ের মাধ্যমে তার প্রতি ইনসাফ বা ন্যায়বিচার করবেন।”

তিবরানী এ হাদিসটি হযরত সাওবান (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

জালিম প্রসঙ্গে
২৬০. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামতের দিন মহান ও প্রতাপশীল আল্লাহ যমনি ও আসমানসমূহকে নিজের ডান হাতে নেবেন, অতঃপর বলবেন, “আমি প্রতাপশালী রাজাধিরাজ। জালেমগণ কোথায়? অহংকারীগণ কোথায়?”

ইবনে উমর (রা) ও ইবনে আমর (রা) থেকে এ হাদীসটি ইবনে মাজা, ইবনে জারীর তিবরাণী ইবনে ওমর (রা) থেকে সহীসূত্রে সংগ্রহ করেছেন।

২৬১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্‌ বলেন, “আমি আমার ইযযত ও মহত্ত্বের কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি জালিমের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করব, শ্রীঘ্রই হোক কিংবা দেরিতে। নিশ্চয়ই আমি তার উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করব, যে মজলুমকে দেখেছি এবং তাকে সাহায্য করার মতাবান হয়েও সাহায্য করেনি।”

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)

নিহত ব্যক্তি ও হত্যাকারীঃ
২৬২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- অন্যায়ভাবে নিহত ব্যক্তি কেয়ামতের দিন তার হত্যাকারী হাত ধরে সম্মানিত প্রভুর সামনে উপস্থিত হবে। এসময় তার শিরা হতে রক্ত ঝরতে থাকবে। অতঃপর সে বলতে থাকবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনি তাকে জিজ্ঞেস করুন, কি কারণে সে আমাকে হত্যা করেছিল?” প্রত্যুত্তরে অভিযুক্ত জন বলবে, “তাকে আমি অমুকের ইযযতের জন্য ৯ষম্মান) রার্থে) হত্যা করেছিলাম।” তখন তিনি বলবে, “ওটা (ইযযত) আল্লাহরই জন্য।”

তিবরানী এ হাদীসটি হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

ইয়াতীমের সম্পদ আত্নসাৎ
২৬৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামতের দিন সুমহান আল্লাহ্‌ একদল মানুষকে কবর থেকে উত্থিত করবেন। তাদের মুখে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকবে। (তাদেরকে বলা হবে), “তোমরা কি জান না যে, মহান আল্লাহ্‌ বলেছেন, যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ ভণ করে, নিশ্চয়ই আগুন দিয়ে তারা তাদের উদর পূর্ণ করে এবং অতিসত্তর তারা জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।?”

ইবনে আবূ শায়বা এ হাদীসটি হযরত আবি বারয়া (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

মজলুম প্রসঙ্গে
২৬৪. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মজলুমের দু’আ মেঘের উর্ধ্বে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার জন্য আকাশের দ্বারগুলো খুলে দেয়া হয়। আর মুবারক ও মহান প্রতিপালক বলেন, “আমার ইযযতের কসম! দেরিতে হলেও নিশ্চয়ই আমি তোমায় সাহায্য করব।”

ইবনে হাব্বান এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

২৬৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “কোন বান্দার প্রতি যখন অত্যাচার করা হয়, আর সে প্রতিশোধ গ্রহণের মতা রাখে না এবং এরূপ কেউ থাকে না যে, সেই মজলুমের সাহায্যকারী হয়, তখন সে আকাশের দিকে স্বীয় দৃষ্টি ফিরায় এবং আল্লাহ্‌কে ডাকে। আল্লাহ্‌ বলেন, “হে আমার বান্দা! আমি উপস্থিত, আমি এখন থেকে (ইহ ও পরকালে) তোমাকে সাহায্য করব।”

হাকেম এ হাদীসটি হযরত আবুদ দারদা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

২৬৬. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান আল্লাহ্‌ বলেছেন, “হে আদম সন্তান! তুমি যখন অত্যাচারিত হও তখন অপরের বিরুদ্ধে শুধু এ অভিযোগটুকু কর যে, সে তোমার প্রতি জুলুম করেছে। আর অপর কেউ যদি তোমার বিরুদ্ধে এজন্য অভিযোগ পেশ করে যে, তুমি তার উপর জুলুম করেছ, তবে আমার ইচ্ছা অনুযায়ী আমি তোমার ও তোমার বিপরে অভিযোগ গ্রহণ করি, আর আমি যদি চাই তবে তোমাদের দু’জনকে কেয়ামত পর্যন্ত বিলম্বিত করে দেই। তখন তোমাদের দু’য়ের জন্য আমার মাকে প্রশস্ত করে দেই।”

হাকেম এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

দূর্বলকে সহায়তার পুরস্কার
২৬৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্‌ বলেন, “যে লোক আমার সৃষ্টির মধ্য থেকে এরূপ দুর্বলকে সহায়তা করে, যার সাহায্যকারী কেউ নেই, আমি এ বান্দার রণাবেণের দায়িত্ববান হলাম।”

খাতীব এ হাদীসটি দীনার থেকে, তিনি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

আল্লাহর সর্বাপেক্ষা প্রিয় বান্দাঃ
২৬৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মূসা ইবনে ইমরান (আ) নিবেদন করলেন, “হে প্রতিপালক! তোমার নিকট তোমার বান্দাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি প্রিয়?” আল্লাহ বললেন, “সে লোক, যে প্রতিশোধ গ্রহণ সক্ষম হয়েও মাফ করে দেয়।”

বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।হাকেম এ হাদীসটি ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

২৬৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- জালেম ও বিদ্রোহী হইও না; কারণ মহান আল্লাহ্‌ বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের জুলম তোমাদের নিজেদের প্রতিই আপতিত হবে।”

হাকেম এ হাদীসটি হযরত আবূ বাকার (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।